সীতাকুণ্ডের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর কারনে কি আমাদের ক্ষতি হবে

সীতাকুণ্ডের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশ ব্যাপী যে গুজবটি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই ব্যাপারেই আজকের এই পোস্ট। মূলত যে বিষয়টিকে এখানে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে বাতাসকে টক্সিক করে দিয়েছে, যার কারণে সামনের কয়েকদিন বৃষ্টি হলে সেই বৃষ্টিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশে থাকবে!
এতে ভিজলে নাকি মারাক্তক ক্ষতি হবে বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষ যারা আছেন তাদের! অনেকে নাকি মারাও যেতে পারে!?

কিন্তু আদৌ কি তাই? সবার আগে বুঝতে হবে যে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সংকেত কি? এটা কি নিয়ে গঠিত?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী এবং কতটা বিপজ্জনক?

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সংকেত হচ্ছে (H2O2)। এখানে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও দুইটি অক্সিজেন পরমাণু আছে। যখন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভাঙ্গে বা বিস্ফোরণ হয় তখন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভেঙে পানি এবং অক্সিজেন তৈরি করে। যেটার সংকেত H2O এবং O2।

সাথে কিছু অংশে বষ্পে পরিনত হয়।

সীতাকুণ্ডের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর কারনে কি আমাদের ক্ষতি হবে

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের গলনাঙ্ক -০.৪৩° সেলসিয়াস এবং এর স্ফুর্ণাঙ্ক প্রায় ১৫০° সেলসিয়াস। স্ফুটনাংক পানির থেকে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই জন্য পানি যে তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তার থেকেও অধিক তাপমাত্রায় সাধারণত বিস্ফোরণের মাধ্যমে বাষ্পে পরিণত হতে পারে। কারণ অধিক তাপমাত্রায় এটি বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। এটি রকেটের জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের খুব স্বল্প ঘনত্বের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় না। গবেষণা অনুযায়ী, হাইড্রোজেন অক্সাইড যদি অধিক ঘনত্বের হয় অর্থাৎ ৩০ পার্সেন্টের অধিক মাত্রার হয় তবে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড অত্যন্ত ক্ষতিকর। ১০% এর বেশি শ্বাস নিলে গুরুতর ফুসফুসের জ্বালা হতে পারে। হাইড্রোজেন পারক্সাইড দ্রবণ গিলে ফেলা বিশেষত বিপজ্জনক। তবে মানুষের শরীরেও হাইড্রোজেন পারক্সাইড আছে যা খুবই স্বল্প মাত্রার।

তাহলে মূল কথায় আসি, সীতাকুন্ডের বিস্ফোরণ এর সময় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড এর যে মাত্রা ছিল তা অবশ্যই বিপদজনক ছিল (এখনো ডিপোর আসেপাশে বিপদজনক মাত্রা)। কিন্তু ডিপোর থেকে কিছুটা দূরবর্তী এলাকার বাতাসের তা খুবই স্বল্প মাত্রায় মিশে আছে। এখন যদি বৃষ্টি হয় তাহলে এই স্বল্পমাত্রার হাইড্রোজেন পারক্সাইড বৃষ্টির পানির সাথে মিশে খুবই স্বল্প মাত্রার দ্রবন তৈরি করবে। যেটার মাত্রা মানুষের সহনশীল মাত্রার মধ্যেই। সুতরাং এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তবে ডিপো এলাকার বাতাস কিছুটা অনিরাপদ তাই এখানে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফিল্টার ব্যাবহার করতে হবে।

কিন্তু যারা আগামী দশ দিন বৃষ্টির পানিতে ভিজা নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন যে সারাদেশে এর কারণে আগামী দশ দিনে সকল বৃষ্টির পানিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশে বিষাক্ত পানির সৃষ্টি করবে! আবার এতে নাকি মানুষের ওই বৃষ্টির পানিতে প্রচুর ক্ষতি হবে! অনেকে মারাও যেতে পারেন! এই বিষয়গুলা আসলে গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। বৃষ্টির পানিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মাত্রা খুবই কম থাকবে, তবে তা ডিপো এলাকার আসেপাশেই। যা সহনশীলতার ভিতরেই।

আর হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পানির সাথে মিশলে এসিড উৎপন্ন করেনা বরং এটি শক্তিশালী জারক হওয়ায় বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি অতিরিক্ত থাকলে পানির সাথে বিক্রিয়া করতে সহায়তা করত এবং এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করত। কিন্তু সীতাকুণ্ডে ঐ সকল দূষক গ্যাস এর মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।

তাই এসিড বৃষ্টিরও আশঙ্কা নেই। সুতরাং এতে গুরুতর ক্ষতি বা মারা যাওয়ার মতো কোন বিষয় নেই। তাই গুজব এরিয়ে চলুন।
সকল তথ্যঃ unknown ছবিঃ উইকিপিডিয়া

Share the article..

Leave a Comment