পদ্মা সেতু সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য দেখুন এখানে পদ্মা সেতুর টোল, খরচ, পিলার ও স্প্যান সংখ্যা

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য দেখুন এখানেপদ্মা সেতুর টোল, খরচ, পিলার ও স্প্যান সংখ্যা। আজ ২৫ শে জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে। এই পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আজকে উদ্বোধনের মাধ্যমে। সেই সাথে আজকে আপনাদের সাথে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত আলোচনা করব।পদ্মা সেতুর টোল, খরচ, পিলার ও স্প্যান সংখ্যা। পদ্মা সেতু সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য এখানে আলোচনা করা হবে।পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা কত মিটার সব কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজকে। বেশি কথা না বলে চলুন শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেলটি পদ্মা সেতু নিয়ে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন কবে?

সেতু উদ্বোধন: ২৫ জুন ২০২২।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু

অবশেষে উদ্বোধন হলো বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু । আজ ২৫ জুন ২০২২ তারিখ রোজ শনিবার বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন । গত ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলারের কাজ দিয়ে । পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। সেতুর কাজ ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (এমবিইসি)। কাজ শেষ হলেও প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আরো এক বছর। ২০২৩ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্প শেষ হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজের কোনো ত্রুটি থাকলে, তা নিজ দায়িত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত বা পুনঃনির্মাণ করে দেবে।

পদ্মা সেতুর অফিসিয়াল তথ্য

  • নাম : পদ্মা সেতু
    দৈর্ঘ্য : ৬.১৫ কিলোমিটার
    ভায়াডাক্ট (স্থলভাগে সেতুর অংশ) সহ দৈর্ঘ্য : ৯.৮৩ কিলোমিটার
    প্রস্ত : ২১.৬৫ মিটার
  • মোট পিলারের সংখ্যা : ৪২টি
    স্প্যানের সংখ্যা : ৪১টি
    প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য: ১৫০ মিটার
    স্প্যানগুলোর মোট ওজন: ১,১৬,৩৮৮টন
    প্রতিটি পিলারে নিচে পাইলের সংখ্যা: ৬টি (কিছু কিছু পিলারে ৭টি পাইলও দেওয়া হয়েছে)
  • পাইলের ব্যাস: ৩ মিটার
    পাইলের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য: ১২৮ মিটার
    মোট পাইলের সংখ্যা: ২৬৪টি ( ভায়াডাক্টের পিলারের পাইলসহ ২৯৪টি)
    জমি অধিগ্রহণ: ৯১৮ হেক্টর
    ব্যবহৃত স্টিলের পরিমাণ : ১,৪৬,০০০ মেট্রিক টন
  • নির্মাণ কাজ শুরু : ৭ই ডিসেম্বর ২০১৪
    মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু : মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলারের কাজ দিয়ে
    সক্ষমতা : দৈনিক ৭৫ হাজার যানবাহন
  • পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা: ১৮ মিটার
    পদ্মা সেতুর আকৃতি: ইংরেজি এস (S) অক্ষরের মতো
    ভূমিকম্প সহনশীলতা : রিক্টার স্কেলে ৮ মাত্রার কম্পন
  • এপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য: ১২ কিলোমিটার
    নদীশাসন: ১৬.২১ কিলোমিটার
    সেতুর আয়ুষ্কাল: ১০০ বছর
    সেতুর মোট ব্যয়: ৩০,১৯৩.৩৯ কোটি
  • ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে এমন জেলার সংখ্যা: ২১টি
    সরাসরি উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা: দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষ
  • যেসব দেশের বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন : চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, থাইওয়ান, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রকল্পের অঙ্গ(component) ভিত্তিক ব্যয় বিভাজন:

  • মূল সেতুর ব্যয়: ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয়সহ ১১,৯৩৮.৬৩ কোটি টাকা (বরাদ্দ ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)
  • নদীশাসন কাজ: ৮,৭০৬.৯১ কোটি টাকা (৯,৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে)
  • অ্যাপ্রোচ রোড: ২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা বিল্ডিং ও ৩টি সার্ভিস এরিয়াসহ ১৮৯৫.৫৫ কোটি টাকা (১৯০৭.৬৮ কোটি টাকার বিপরীতে )
  • পুনর্বাসন ব্যয়: ১,১১৬.৭৬ কোটি টাকা (১,৫১৫ কোটি টাকার বিপরীতে)
  • ভূমি অধিগ্রহণ: ২৬৯৮.৭৩ কোটি টাকা
  • পরিবেশ: ২৬.৭২ কোটি (১২৯.০৩ কোটি টাকা)
  • অন্যান্য বেতন ভাতা, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা ইত্যাদি: ১৩৪৮.৭৮ কোটি (২৪০৯.৫৬ কোটি টাকার বিপরীতে)
  • প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয়: ২৭,৭৩২.০৮ কোটি টাকা (৩০১৯৩.৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)
  • সেতু উদ্বোধন: ২৫ জুন ২০২২।

(তথ্যসূত্র: পদ্মা সেতু প্রকল্প অফিস, ক্যাবিনেট ডিভিশন, সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার কপি; আপডেট: ২৩ জুন ২০২২)

এক নজরে পদ্মা সেতু সম্পর্কিত সকল তথ্য

  1. নামঃ পদ্মা সেতু
  2. অফিশিয়াল নামঃ পদ্মা ও বহুমুখী সেতু
  3. মোট দৈর্ঘ্যঃ৬.১৫ কিলোমিটার (২০,২০০ ফুট)
  4. প্রস্থঃ ১৮.১০ মিটার (৫৯.৪ ফুট)
  5. নকশাকারঃ AECOM
  6. নির্মাণকারী প্রতিশঠানঃ চায়না মেজর ব্রিজ
  7. ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ
  8. নির্মাণ শুরুঃ ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪
  9. নির্মাণ শেষঃ জুন ২০২২
  10. স্থানঃ মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর
  11. স্থানাঙ্কঃ ২৩.৪৪৬০° উত্তর ৯০.২৬২৩° পূর্ব

পদ্মা সেতু যে দিক দিয়ে সেরা

  • বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেল সেতু -হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
    নদীর উপর নির্মিত বিশ্বের প্রথম দীর্ঘতম সেতু-পদ্মা সেতু
  • বাংলাদেশের দীর্ঘতম সড়ক সেতু-পদ্মা সেতু
    এর আগে দীর্ঘতম সড়ক সেতু ছিলো-যমুনা সেতু
    পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছিলো – ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে
  • প্রতিটি স্প্যানের ওজন -৩২০০ টন
    পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয় যে দিবসে-বিশ্ব মানবাধিকার দিবস
  • পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’।
  • পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে (যা বিশ্বে প্রথম)।
    পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় (মূল সেতুতে) ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড।
  • পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা।
  • পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।
  • পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।
  • পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
  • পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার।
  • পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
  • পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।
  • পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।
  • পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।
  • পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা রয়েছে ৬০ ফুট।
  • পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট।
  • পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি, স্প্যান ৪১টি।
  • প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হয়েছে ৬টি। তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে।
  • পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৮৬টি।
  • পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।
পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু

পদ্মাসেতু নির্মাণকাজ শুরু ও শেষের তারিখ

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ০৭ ডিসেম্বর। নির্মাণ কাজ শেষ হয় জুন ২০২২ এ। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এর সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে এই সেতু। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সাথে উত্তর পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটিয়েছে। সাথে থাকছে দুই স্তরবিশিষ্ট এবং কংক্রিট নির্মিত। দুই স্তরের মধ্যে উপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের তোর টিকে থাকবে একটি রেলপথ। পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান সংখ্যা ৪১ টি একেকটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা কত মিটার?

এই অংশে আমরা পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতা কত মিটার তা নিয়ে আলোচনা করব । পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯.৩০ কিলোমিটার যেখানে সংযোগ সড়কসহ ৩.১৫ কিলোমিটার অর্থাৎ শুধু সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার । এছাড়াও প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রস্থ ২১.৬৫ মিটার । পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা রয়েছে পদ্মা ৬০ ফুট ।

পদ্মা সেতু নির্ধারিত টোল

পদ্মা সেতু নির্ধারিত টোল আদায় করবে মূলত হচ্ছে চিনা কোম্পানি। যানবাহনের শ্রেণীবিভাগ নির্ধারণ করে মোট ১৩টি শ্রেণীর যানবাহনের কাছে থেকে পদ্মা সেতুর নির্ধারিত টোল আদায় করা হবে । পদ্মাসেতু পার হতে কোন বাহনে কত টোল। যার জন্য ইতিমধ্যেই প্রতিটি যানবাহনের টোল আদায়ের লিস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে । আধুনিক পদ্ধতিতে মাত্র তিন সেকেন্ডের মাধ্যমে প্রতিটি মান নির্ণয় করা হবে । নিচের ছকে পদ্মা সেতুর নির্ধারিত টোল আদায়ের যানবাহনসহ টাকা উল্লেখ করা হলো।

ক্রমিক যানবাহনের শ্রেণি টোল হার (টাকায়)
মোটরসাইকেল ১০০.০০
কার, জীপ ৭৫০.০০
পিকআপ ১২০০.০০
মাইক্রোবাস ১৩০০.০০
ছোট বাস (৩১ আসন বা এর কম) ১৪০০.০০
মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) ২০০০.০০
বড় বাস (৩ এক্সেল) ২৪০০.০০
ছোট ট্রাক(৫ টন পর্যন্ত) ১৬০০.০০
মাঝারি ট্রাক (৫ টন এর অধিক হতে ৮ টন পর্যন্ত) ২১০০.০০
১০ মাঝারি ট্রাক (৮ টনের অধিক হতে ১১ টন পর্যন্ত) ২৮০০.০০
১১ ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫৫০০.০০
১২ ট্রেইলার (৩ এক্সের পর্যন্ত) ৬০০০.০০
১৩ ট্রেইলার (৪ এক্সেলের অধিক) ৬০০০.০০ + প্রতি এক্সেল ১৫০০.০০

পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু?

আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু বিশ্বের মধ্যে ১২২ তম স্থানে অবস্থান করছে । ইতোমধ্যেই আমাদের পদ্মা সেতু সুইডেনের অল্যান্ড ব্রিজকে পেছনে ফেলে ১২২ তম অবস্থান নিয়েছে । যা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের একটি গর্বের বিষয় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে প্রমত্ত পদ্মার বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হয়ে ।

পদ্মা সেতুর পিলার ও স্পান সংখ্যা কতটি?

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে এই অংশে আমরা জানবো পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা মোট কতটি । পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর । প্রথম স্প্যানটি বসানো হয় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর । এবং শেষ অর্থাৎ ৪১ তম স্প্যানটি বসানো হয় ১২ ও ১৩ নম্বর খুটির উপরে । যেখানে প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রস্থ ২১.৬৫ মিটার । ৪১ টি স্প্যান বসাতে সময় লাগে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন । উল্লেখ্য যে, পদ্মা সেতুর পিলার ৪২টি এবং স্প্যানের সংখ্যা ৪১টি । উক্ত ৪১ টি স্প্যানগুলোর মোট ওজন: ১,১৬,৩৮৮ টন ।

পদ্মা সেতুর উপকারিতা

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু অপেক্ষাকৃত অনন্যতা অঞ্চলের সামাজিক অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভাবে অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু ফলে প্রায় ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার বা ১৭ হাজার বর্গমাইল । আপনি জেনে অবাক হবেন পদ্মা সেতুর ফলে বাংলাদেশের মোট এলাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে তিন কোটির অধিক জনগণ প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হবে। পদ্মা সেতুর ৬.১৫ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ভবিষ্যতে হরি এল গ্যাস বিদ্যুৎ লাইন এবং ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণ এর ব্যবস্থা।

পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে গুজব ও বিতর্ক

পদ্মা সেতুর নির্মাণের বিষয়ে একটি সময় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে পদ্মা সেতু তৈরিতে । ফেসবুক সহ অন্যান্য সোসিয়াল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে যে পদ্মা সেতু তৈরিতে মানুষের মাথা লাগে। তবে এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং গুজব । তাই এ ঘটনাকে গুজব ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে ৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এক্ষেত্রে গবেষকরা সেতু কর্তৃপক্ষকে সেতুটি নির্মাণে খুঁটিনাটি সকল তথ্য জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন

নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র নয় দিন বাকি। উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মানুষের উচ্ছ্বাস ততই বাড়ছে। তিনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় কোটি বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ৪০ তলার সমান পাইলিং, ১০ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার বেয়ারিং আর নদী শাসনে এ মেগা স্ট্রাকচার গড়েছে বিশ্বরেকর্ড। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হলে ১২০ বছরেও কিছু হবে না এ সেতুর। পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্টরা এমনটাই বলছেন। সূত্রমতে, খরস্রোতার দিক থেকে বিশ্বে আমাজনের পরেই পদ্মা নদীর অবস্থান। পানি প্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে। তেমন একটি নদীকে বশে এনে নিজের টাকায় এমন ইমারত। বহুরূপী একটি নদীর তলদেশে পাইলিং করতেও কম বিপাকে পড়তে হয়নি। একেকটি পিলারের নিচের মাটি ছিল একেক রকম।

শেষ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১২৮ মিটার পাইলিং করতে হয়েছে। পিলারের ওপর ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। আবার রেকর্ড পরিমাণ নদী শাসন করেই বাগে আনতে হয়েছে পদ্মাকে। জানা গেছে, সানফ্রানসিস্কোতে অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে যেটা আছে, সেটা ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টন সহনশীল। পদ্মা সেতুতে ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে। আরেকটা বিশ্বরেকর্ড হলো, এখানে দুই দিকে ১২ কিলোমিটার নদী শাসনের যে কাজটি আছে, সেটি সিঙ্গেল কন্ট্রাক্টে বিশ্বে সর্বোচ্চ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে এমন কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে যা বিশ্বের অন্য কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। বিভিন্ন দিক দিয়ে পদ্মা সেতু বিশ্বে রেকর্ড করেছে। ভূমিকম্প বেয়ারিং টেস্টিং করার জন্য চীন থেকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে এবং আসতে শুধু প্লেন ভাড়াই খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা।

এ সেতু নির্মাণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যামার ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুর পাইল ১২২ মিটার লম্বা ও এর ডায়ামিটারের আয়তন তিন মিটার। বিশ্বের কোনো সেতুতে এ ধরনের পাইল ব্যবহার করা হয়নি।’ সেতু সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সংযোগ সেতু ও সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও রেললাইনসহ দ্বিতল সেতুর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন কাজে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, পুনর্বাসনে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ২৭০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও অন্যান্য ব্যয় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে ২৯৪টি পাইল রয়েছে। এসব পাইলের গড় গভীরতা ১২২ মিটার; যা ৪০ তলা ভবনের সমান। নদীর তলদেশের মাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় ২২টি পিলারেরর ৭১টি পাইলে স্কিন গ্রাউট করতে হয়েছে।

পদ্মা সেতুর বাজেট ২০২২, নির্মাণে মোট খরচ বা ব্যয়

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু । এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয় । দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে । পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় সেতুটি অবস্থিত । পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা । এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি । বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার । ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ ।

ভূপেন হাজারিকা সেতু এবং পদ্মা সেতুর পার্থক্য ?

®* ভারতে চালু হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ ভূপেন হাজারিকা সেতু ৯.১৫ কিলোমিটার আর আমাদের পদ্মা সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার ।

দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেশি । কেন বেশি এই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন । অনেকেই দুর্নীতির গন্ধ বের করার চেষ্টা করছেন , যেখানে খোদ বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির প্রমান দিতে না পেরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে নাকে খৎ দিয়ে গেছে । আসুন দুই সেতু’র মধ্যে পার্থক্য টুকু দেখা যাক…

®* ভুপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড মাত্র ৬০ টন। সেখানে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন। ভারতের ওই সেতুর একেকটি পিলার ১২০ টনের। আর পদ্মা সেতুর একটি পিলার ৫০ হাজার টনের। সে হিসেবে ভারতের সেতুটির চেয়ে পদ্মাসেতু হতে চলেছে ১৩৩ গুন বেশি শক্তিশালী।

®* বিশ্বের আর কোনও সেতু তৈরীতে পদ্মার মতো নদীর এতো তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথতে হয়নি , বসাতে হয়নি এত বড় পিলার। আর পদ্মার মতো স্রোতস্বীনী এমন নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। পদ্মাসেতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের সব চেয়ে ব্যতিক্রমী সেতু হবে। কারণ খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজান নদীর পরই বিশ্বে বাংলাদেশের পদ্মানদীর অবস্থান, যার ওপর দিয়ে সেতু করা হচ্ছে।

®* পদ্মা সেতুর মতো দ্বিতল (গাড়ি ও ট্রেন) সেতু পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকটি আছে। আর দুই লেনের ভূপেন হাজারিকা সেতুর উদাহরণ পৃথিবীতে কয়েকশ পাওয়া যাবে।

পদ্মানদীর শুধু মাওয়া পয়েন্টে মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় তা রাজধানী ঢাকার সারাদিনের যত পানি লাগে তার সমান। হিসাব মতে, পদ্মা নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহ রয়েছে। পানি প্রবাহের দিক বিবেচনায় বিশ্বে আমাজান নদীর পরেই এই প্রমত্তা পদ্মা।

®* পদ্মানদীতে পাথরের স্তর মিলেছে ১০ কিলোমিটার গভীরে। বিশ্বের অন্যান্য নদী ও নদীর ওপর সেযব সেতু আছে সেগুলোর কোনোটিরই পাথরের স্তর এতো নিচে নয়। এ কারণে ৪০০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়েছে। যা পৃথিবীর সেতু নির্মাণে বিরল ঘটনা। একেকটি পাইলের ওজন ৮ হাজার ২০০ টন। আর পাইল এতো গভীরে যাচ্ছে যে- ভেতরে এটি ৪০ তলা ভবনের সমান হবে।

®* পদ্মাসেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হ্যামার লাগবে সেটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। পৃথিবীর কোথাও আর কোনো সেতুতে এমন শক্তিশালী হ্যামার ব্যবহৃত হয়নি। এই হ্যামারটি জার্মানি থেকে বিশেষ অর্ডারে তৈরি করে আনা।

®* পদ্মাসেতুর যে পাথর ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটির ওজন এক টন। এ পাথর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে (পাকুর পাথর) আমদানি করা হয়েছে। মাত্র ১৫ টুকরো পাথরে ভরে যায় একটি বড় ট্রাক।

®* আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারখানা বলা যায় পদ্মাসেতুর পাইল ও স্প্যান ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড। যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে সেতুর পাইল আর স্প্যান। এই ইয়ার্ডের আয়তন ৩০০ একর। এর একদিকে প্লেট ঢুকছে অন্যদিকে পাইল বের হচ্ছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু নিয়ে আমাদের শেষ কথা

আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হল পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করা তাও আমাদের নিজেদের টাকায়। অনেক চড়াই উতরাই পার করে এই সেতু তৈরি হয়েছে। যা মোট ২৯ টি জেলার সাথে ,দক্ষিন ও দক্ষিন পশ্চিমের ২১ টি জেলার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে । সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত এবং একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে অনেক সহযোগিতা করবে।

Share the article..

Leave a Comment