জীবনটা কি খুব বেশি কঠিন মনে হচ্ছে?

জীবনটা কি খুব বেশি কঠিন মনে হচ্ছে??

আসেন ৩টা ঘটনা পড়ি। তাহলে বুঝতে পারবেন জীবনের মানে কি কেন জীবন কঠিন মনে হচ্ছে কিভাবে জীবনকে সহজ করে তুলবেন তো দেখা যাক উপরোক্ত তিনটি ঘটনা.

■ দৃশ্যপট-১:
“আমার বয়স মাত্র ২৬ বছর! এই বয়সে আমার ৩টা ছেলেমেয়ে!বড় ছেলেটারই বয়স ১১! কেমন বুড়িয়ে গেছি আমি; মোটা হয়ে গেছি। অথচ আমার বয়সী মেয়েদের এখনো বিয়েই হয়নি; কত স্বাধীন আর স্মার্ট ওরা! খুব কষ্ট হয়; কেন এত তাড়াতাড়ি আব্বা-আম্মা বিয়ে দিয়ে দিলেন? ”
একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করল যুথি!

সবাই মোটামুটি sad রিএক্ট দিল, সমবেদনা জানাল। তবে ৩ জনের কমেন্ট অন্য রকম ছিল।

☆ব্যতিক্রমী কমেন্ট ১:- আপু আমারও ২৬; অথচ বাবা-মা এখনো বিয়ে দেবার ব্যাপারে সিরিয়াস না; যাও ২/১ টা সম্বন্ধ আসে; কিছুদূর কথাবার্তার পর বলে মেয়ের বয়স বেশি!

☆ব্যতিক্রমী কমেন্ট ২:-বোন, তুমি তো আমারই বয়সী, অথচ দেখো না আমি এই বয়সে বিধবা হয়ে বসে আছি। বাবা-মা বেঁচে নেই আর বিয়েশাদীর সম্ভাবনাও নেই; বিধবা+বয়স বেশী পাত্রীকে কে আর পছন্দ করবে?

☆ব্যতিক্রমী কমেন্ট ৩:- বাহ্ আপনি তো আমারই বয়সী; আর আমার ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল; অথচ আজও আমার কোল শূন্য। এমনিতেই সে(স্বামী) ড্রাগ এডিক্টেড, প্রতিদিন মারে আমাকে। তারউপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বলছে যেন আমাকে ছেড়ে দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে….।আপনি তো আসলে খুব ভাগ্যবতী আপু।

.
■ দৃশ্যপট-২:
নতুন বিয়ে হয়েছে নীলিমার। বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে-
“আর বলিস না; আব্বু কোথা থেকে ধরে এনে ১টা হুজুরের সাথে বিয়ে দিল, সে বোরকা ছাড়া আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেবে না বলেছে; আরো কি কি যেন বলছে আমায় ১৪ জন পুরুষ ছাড়া কারো সামনে যেতে দিবে না! এই তাসনীম, তুই তো আগে থেকেই পর্দা করিস; তুই জানিস এগুলো?”
-তাসনীমের গলাটা ধরে এলো! তাসনীমও ম্যারিড আর তার স্বামী গতকাল তাকে শর্ত দিয়েছে- “হয় পর্দা ছাড়ো নইলে তোমার সাথে আমার আর কনটিনিউ করা পসিবল না; আমার রিলেটিভস, ফ্রেন্ডস,কলিগ সবার সামনে আমি আর ছোট হতে পারবো না।”

.
■ দৃশ্যপট-৩:
” উহ্! ছেলেমেয়ে গুলির জালায় অতিষ্ট আমি! সংসার করা যে কত কষ্ট! বাচ্চাকাচ্চা নাই, সংসার নাই অনেক ভাল আছো তুমি”। সদ্য ডিভোর্সি সুমাইয়াকে বলছে তার ভাবী।
সুমাইয়া: জানো ভাবি আমার না ঐ দুআ’টা খুব ভাল লাগে।
ভাবী: কোন দুআ?
সুমাইয়া: রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি ছগীরা।
ভাবী: হ্যা আমারও খুব প্রিয় দুআ’টা। আমি আম্মার জন্য এই দুআ’টা করি আর ছেলেমেয়ে ২টাকেও শিখেয়ে দিছি; বলেছি আমি মরে গেলে আমার জন্য এই দুআ’টা করবি।
সুমাইয়া: আমি মরে গেলে আমার জন্য এই দুআটা কে করবে ভাবী?(কথা শেষ হতে না হতেই দুচোখ জলে ভেসে যাচ্ছে সুমাইয়ার)

.
.
————–
আমরা মোটামুটি প্রত্যেকেই নিজের দুঃখ কষ্টকে বড় করে দেখি অন্যের চেয়ে। অথচ আপনার কাছে যেটা কষ্ট, সেটাই হয়তো অন্যের কাছে নেয়ামত; বড়ই আকাঙ্ক্ষিত!! “রব্বে কারীম আমাকে অন্য অনেকের চেয়ে অনেক ভাল রেখেছেন/ আমার চেয়ে আমার আরেক ভাই বা বোন তার জীবনে আরো কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও সবর করছেন; আলহামদুলিল্লাহ্ বলছেন”- এই কথাগুলি আমরা যেন বুঝেও বুঝতে চাই না।

অন্যের সাথে আমি আমার তুলনা কেন করতে যাব? দুনিয়াটা পরীক্ষাকেন্দ্র; আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন আমার জন্য যেই প্রশ্নটা ভালবেসে রেডি করে রেখেছেন আমি সেই প্রশ্নেই হ্যাপী আর সেই প্রশ্নেই পরীক্ষা দিব ইনশাআল্লাহ্ ।প্রশ্নের কোন অংশ কঠিন মনে হলে সেই রব্বুল ইজ্জাতের কাছেই সাহায্য চাইবো যেন তিনি আমার জন্য সহজ করে দেন; পাশ করিয়ে দেন।…. কিভাবে চাইবো? স্বয়ং আল্লাহ্ তাআ’লা শিখিয়ে দিচ্ছেন-

وَٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةَِۚ

আর তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। (2:45)
.

ইনশাআল্লাহ্ চাইবো তো এভাবে …ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে…

ইনশাআল্লাহ!! তবুও হতাশ হবো না??

Share the article..

Leave a Comment