সোনার তরী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর` বাংলা কবিতা

‘সোনার তরী‘ কবিতা টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাধারণ একটি কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত যত বাংলা কাব্যগ্রন্থ রয়েছে তাদের মধ্যে সোনার তরী অন্যতম। এই কবিতাটি বাংলা কাব্যগ্রন্থের রোমান্টিক কাব্য হিসেবে সংকলিত করা হয়েছে। এটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯৪ সালের দিকে।এই কবিতাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্য প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে। তার অসংখ্য কালোত্তীর্ণ কাব্যের মধ্যে এটি একটি।

সোনার তরী কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা
কুলে একা বসে রয়েছি, নাহি ভরসা
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা–
এপারেতে দেখি ছোট খেত, আমি একেলা

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে যেন আসে পারে
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে
ভরা পালে চলে যায়,
কোন দিকে নাহি চাই,
ঢেউগুলি নিরুপায়,
ভাঙ্গে দুই ধারে-
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে!

ওগো তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে!
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে!
যেয়ো যেথা যেতে চাও
যারে খুসি তারে দাও
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে

যত চাও তত লও তরণী পরে।
আর আছে?—আর নাই, দিয়েছি ভরে’।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে’
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে
এখন আমারে লহ করুণা করে’

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! ছােট সে তরী
আমারি সােনার ধানে গিয়েছে ভরি’।
শ্রাবণ গগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি’,
যাহা ছিল নিয়ে গেল সােনার তরী।

সোনার তরী কবিতার মূলভাব

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যত অসাধারণ কবিতা রয়েছে তার মধ্যে সোনার তরী কবিতা উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্য গ্রন্থটি রচনা করার সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

যার কারণে তিনি গ্রাম অঞ্চলের নর-নারীর সুখ-দুঃখ আশা, নিরাশা এবং মান-অভিমানের সাথে নিবিড় পরিচয় মেলে এবং তা অনুভব করার সুযোগ পায়।

কবিতাটির অন্তরালে কবি মানুষের জন্য সারা জীবন একটি চিত্র তৈরি করেছেন। নদীর স্রোত যেমন প্রবাহমান তেমনি ঘড়ির কাটা ও তেমন বেগবান।

আমাদের এই পৃথিবীতে মানুষ সারা জীবনই পরিশ্রম করে কাটিয়ে দেয় আর যখন তার সব কিছু হয়ে যায় তখন তার চলে যাওয়ার সময় এসে যায়।

মানুষ তার কর্ম ধ্যান-ধারণার ফল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপকরণ যেমন জগত ভোগ করছে সেইসঙ্গে ব্যক্তিজীবনকে যেন মানুষ স্মরণ করে এটাই হচ্ছে সোনার তরী কবিতার মূল উদ্দেশ্য।

সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা

জানান ইতিমধ্যে সোনার তরী কবিতা টি পড়েছেন কবিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পোষণ করে ফেলেছেন। সোনার তরী কবিতার মূলভাব সম্পর্কেও আমি আপনাদেরকে সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর যেহেতু মূলভাবের ধারণাটি আপনারা পেয়ে গিয়েছেন তাই এর ব্যাখ্যা ও সঠিকভাবে করতে পারবেন।

সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
যারা এতক্ষণে সোনার তরী কবিতার ব্যাখ্যা বা মনোভাব সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন তাদেরকে এবার সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন এবং উত্তর সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

সোনার তরী কবিতা সৃজনশীল প্রশ্ন

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ মহাকাল ধরে যারা জরাজীর্ণ, দীর্ণ, পুরাতন, কালজয়ী সেই সত্য, যাহা নিত্য ক্ষয়হীন দীপ্ত চিরন্তন। কীর্তি যার সুমহান, সত্যপুত যার মহাপ্রাণ।মৃত্যু যারে শ্রদ্ধাভরে এনে দেয় প্রচুর সম্মান

ক.সোনার তরী কবিতার মাঝে কিসের প্রতীক
খ.সোনার তরী’ কবিতায় কৃষকের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছিল? বুঝিয়ে দাও
গ.সোনার তরী কবিতার মূলভাব উদ্দীপকে কিরকম ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?
ঘ.সোনার তরী কবিতার চরিত্রের অন্তরালে কবি যে গভীর জীবনাদর্শন ব্যক্ত করেছেন, উদ্দীপকে তার অনেক অংশে প্রস্ফটিত।মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ মানুষের জীবন হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী।কালের নিয়মে মানুষ আবর্তিত হয় রিক্ত হস্তে নয় ,আবার কালের প্রবাহে হারিয়ে যায় অনন্তে।কিন্তু কাল বা সময় থেমে থাকে না। অনন্তকাল ধরে চলছে দিগন্তের পথে।একেবারে রিক্ত হস্তে নাই বহু কিছুর সাক্ষী হয়ে, বহু নিদর্শন নিয়ে। আর সেই নিদর্শন সৃষ্টি করেছে কালের কিছু মানুষ। কাল তাদের ধরে রাখে নি ধরে রেখেছে তাদের উজ্জ্বল কীর্তি। সেই গৌরব কীর্তি নিয়ে কাল চলে মহাকালের পথে অনন্তকাল ধরে অবিরাম।

ক.সোনার তরী’ কবিতায় সেখানে ছোট ক্ষেতের কথা বলা হয়েছে?
খ.রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হল সারা ব্যাখ্যা করো?
গ.উদ্দীপকের বিষয়বস্তুর সাথে সোনার তরী কবিতার সাদৃশ্য নিরূপণ করো?
ঘ.উদ্দীপকের মূল খাতায় সোনার তরী কবিতার কোভিদ জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে-উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো?

Share the article..

Leave a Comment