পুষ্টির অভাবে কী কী রোগ হতে পারে

হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সকলে অনেক ভালো আছেন। আপনাদের কে আমাদের এই সাইটে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্বাগতম। আজকের পোস্ট এ আমি আপনাদের সাথে পুষ্টির অভাবে কী কী রোগ হতে পারে এই বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে পোস্ট টি শুরু করে দেওয়া যাক।

 

আমাদের সকলের শরীর কে সুস্থ রাখার জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হলো পুষ্টি। পুষ্টির অভাবে আমাদের নানা ধরণের রোগ হয়ে থাকে। পুষ্টির অভাবে আমাদের কী কী রোগ হতে পারে আজকে আমরা সেই বিষয় টি নিয়েই কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

 

পুষ্টির অভাবে যে যে রোগ হতে পারে

পুষ্টির অভাবে যে রোগ গুলো হয় সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

গয়টার (Goitre)

প্রচলিত অর্থে গলগণ্ড বলতে থাইরয়েড গ্রন্থির যেকোনো ফোলাকে বোঝায়। গলগণ্ডের কিছু বিশেষ ধরনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে গয়টার নামে ডাকা হয়, অর্থাৎ সব গলগণ্ড গয়টার নয়। টিউমার, ক্যান্সার, প্রদাহসহ নানা কারণে থাইরয়েড ফুলে যেতে পারে, সেগুলো গয়টার নয়।

আবার, গয়টার থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো নির্দিষ্ট রোগ বোঝায় না, বরং থাইরয়েডের বিভিন্ন রোগের এক সাধারণ বহিঃপ্রকাশকে বোঝায়। নানা কারণে গয়টার হতে পারে। খাবারে আয়োডিনের অভাব গয়টার তথা গলগণ্ডের অন্যতম কারণ।

সমুদ্র থেকে দূরে উত্তর বঙ্গ এবং পার্বত্য এলাকার মাটিতে আয়োডিন কম থাকায় ওই সব অঞ্চলের মানুষের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

 

রাতকানা (Night Blindness)

ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেরোফথ্যালমিয়া (Xerophthalmia) নামক রোগ হয়। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব পূরণ না হলে রোগটির মাত্রা ও তীব্রতা বাড়তে থাকে। জেরোফথ্যালমিয়ার সাত থেকে আটটি মাত্রা রয়েছে, যার সর্বনিম্ন মাত্রা হচ্ছে রাতকানা।

সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়। এতে চোখের সংবেদী ‘রড’ কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, স্বল্প আলোতে ভালো দেখতে পায় না। চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখা যায়।

রোগটা বেড়ে গেলে কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়। রাতকানা দশা থেকে শুরু করে চতুর্থ বা পঞ্চম মাত্রার জেরোফথ্যালমিয়া ভিটামিন ‘এ’ সহ কিছু ওষুধ প্রয়োগে ভালো হয় কিন্তু রোগ চূড়ান্ত মাত্রায় বা তার কাছাকাছি পৌঁছে গেলে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার ছাড়া আর তেমন কিছু করার থাকে না।

এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন: মাছের যকৃতের তেল, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফল (পাকা আম, কলা ইত্যাদি) ও সবজি (মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি) এবং মলা-ঢেলা মাছ খাওয়া উচিত।

 

রিকেটস (Rikets)

এটি কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ নয়, ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে এ রোগ হয়। অনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ, দাঁত ও হাড় গঠন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজে এই ভিটামিন প্রয়োজন। দুধ, মাখন, ডিম, কডলিভার তেল ও হাঙ্গরের তেলে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের ত্বকে জমা থাকা কোলেস্টেরল থেকেও এটি তৈরি হয়, তবে সেক্ষেত্রে ভিটামিন ডি তৈরির শেষ ধাপটি সংঘটিত হয় কিডনিতে।

দেহের হাড়গুলো দুর্বল হওয়া, গিঁট ফুলে যাওয়া, হাড়গুলো বিশেষ করে পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এছাড়া এই রোগে অনেক সময় দেহের কাঠামো ঠিক থাকে না, হাড়গুলো ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং বক্ষদেশ সরু হয়ে যায়।

শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। চোখ এবং জননাঙ্গ ঢেকে রেখে নবজাতককে কিছুক্ষণ রোদে রাখা ভালো। এতে সূর্যালোকের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে শরীরে কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হয়।

নিয়মিতভাবে সারা শরীর সারা দিন কালো বা গাঢ় রঙের কাপড়ে ঢেকে রাখলে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে ঘরের বাইরে না বের হলে ত্বক পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় না এবং এ কারণে ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 

রক্তশূন্যতা (Anemia)

আমাদের দেশে শিশু ও নারীদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা একটি সাধারণ রোগ। রক্তশূন্যতা হচ্ছে দেহের এমন একটি অবস্থা, যখন বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়।

খাদ্যের মুখ্য উপাদান লৌহ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-12 ইত্যাদির অভাব ঘটলে এ রোগ দেখা যায়। রক্তস্বল্পতার শতাধিক কারণ জানা গেছে এবং পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি না হয়েও রক্তস্বল্পতা হতে পারে। তবে বাংলাদেশে সাধারণত লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা বেশি হয়।

শিশুদের, প্রজননের উপযুক্ত বয়সী নারীদের (15-45 বছর) এবং গর্ভবর্তীদের এই রোগ বেশি হয়। লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন, অত্যধিক রক্তপাত ঘটলে, কৃমির আক্রমণে, লৌহ গঠিত খাদ্য উপাদান শরীরে যথাযথভাবে শোষিত না হলে, বাড়ন্ত শিশু বা গর্ভবর্তী নারীদের খাদ্যে

লৌহের পরিমাণ কম থাকলে, অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটলে, কম বয়সী শিশুদের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহের অভাব হলে। রক্তশূন্যতা হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়: দুর্বলতা অনুভব করা, মাথাব্যথা, মনমরা ভাব, অনিদ্রা, চোখে অন্ধকার দেখা, খাওয়ার অরুচি, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।

এ রোগ প্রতিরোধের জন্য লৌহসমৃদ্ধ খাবার, যেমন যকৃৎ, মাংস, ডিম, চিনাবাদাম, শাকসবজি, বরবটি, মসুর ডাল, খেজুরের গুড় খেতে হয়। পরীক্ষা করে অস্ত্রে কৃমির বা হুকওয়ার্ম-এর সংক্রমণ নিশ্চিত হলে কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করা যায়।

প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী লৌহ উপাদানযুক্ত ওষুধ সেবন করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা করা বিপজ্জনক হতে পারে। কেননা রক্তস্বল্পতার এমন কিছু ধরন (যেমন: থ্যালাসেমিয়া) রয়েছে,

যেখানে প্রচলিত মাত্রায় লৌহজাতীয় ওষুধ বা খাদ্য গ্রহণ করলে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা শুরু করার আগে তার সঠিক কারণ নির্ণয় করা আবশ্যক।

 

তো বন্ধুরা আমরা জেনে গেলাম পুষ্টির অভাবে আমাদের কী কী রোগ হতে পারে এবং কোন ভিটামিন এর অভাবে এই রোগ গুলো হয়। এরই সাথে জানলাম এগুলো প্রতিরোধ এর উপায় গুলো৷ তো আমরা সকলে চেষ্টা করবো সঠিক নিয়মে প্রতিরোধ এর নিয়ম মেনে এই রোগ গুলো কে প্রতিরোধ করার।

 

তো বন্ধুরা আশা করি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কিন্তু কমেন্ট করে জানাবেন। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেয।

Share the article..

Leave a Comment