বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport) কি? আবেদন ও সংশোধন করার নিয়ম

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport)কি? যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করে বা প্রবাসী তারা অবশ্যই পাসপোর্ট এর সাথে পরিচিত।সেই পাসপোর্ট এরই একটি ডিজিটাল সংযোজন হলো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট কি অনেকেই জানতে চেয়েছেন আজকে আমরা জানবো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট  কি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট কিভাবে আবেদন সংশোধন করতে হয়| চলুন কথা না বাড়িয়ে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport)কি? আবেদন ও সংশোধন করার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক |

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport) কি?

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট হলো কতগুলো কাগজের সমষ্টি এবং ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট, যা একজন ভ্রমণকারী বা প্রবাসী বহন করে।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্টে যোগাযোগ বিহীন স্মার্ট কার্ড, মাইক্রোপ্রসেসর চিপ বা কম্পিউটার চিপ এবং এন্টেনা, যেগুলো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর সামনে এবং পিছনে বা মাঝখানে সংযুক্ত থাকে।

তবে পাসপোর্ট এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা থাকে। আর অন্যান্য তথ্য গুলো পাসপোর্ট কি স্ক্যান করলেই পাওয়া যাবে।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্টে বর্তমানে একজন ব্যক্তি কে সনাক্ত করার জন্য চেহারা,আঙ্গুলের ছাপ,আইরিশ এসকল বায়োমেট্রিক ব্যবহার করা হয়। যার ফলে পাসপোর্টে সিকিউরিটির দিক থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। পাসপোর্টের বায়োমেট্রিক ফাইলের ধরন এবং যোগাযোগের প্রটোকল আইসিএও নির্ধারন করে দেয়। আসলে প্রতিটি বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যের শুধুমাত্র ডিজিটাল ইমেজ চিপে সংরক্ষিত থাকে।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্টেও আলাদা মেয়াদ থাকে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আপনাকে অবশ্যই সেটা রিনিইউ করে নিতে হবে। তা না হলে আপনি সেটা ব্যবহার করতে পারবেন না।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর মধ্যে যেহেতু একজন ব্যক্তির তথ্য একটি ইলেকট্রনিক চিপ এর মধ্যে থাকে। তাই যেকোন দেশ এবং যেকোন জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই ব্যক্তির তথ্য, স্ক্যান করার মাধ্যমে জানা সম্ভব। একটি নির্দিষ্ট ডিভাইস ছাড়া বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট স্ক্যান করা যায় না।

এছাড়া ওই স্ক্যান ডিভাইসগুলোর সাথে বায়োমেট্রিক তথ্য গুলো যে সার্ভারে জমা আছে, সেই সার্ভার যুক্ত থাকে। যার ফলে কেউ যদি বায়োমেট্রিক স্ক্যান ডিভাইস দিয়েও একজন ব্যক্তির পাসপোর্ট এর তথ্য জানতে চায়, সেক্ষেত্রে জানতে পারবে না। আগে তাকে অবশ্যই বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর ডাটাবেজ সম্পর্কে জানতে হবে।

এতে বোঝা যাচ্ছে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট সাধারণ পাসপোর্ট থেকে কতটা বেশি সুরক্ষিত।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছেই তাদের পাসপোর্ট এর জন্য আলাদা ডাটাবেজ আছে। সেই পাসপোর্ট এর ডাটা সম্পর্কে সকল তথ্য বিশ্বের প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকে।

এছাড়া বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আলাদা পাসপোর্ট অফিস রয়েছে, যেখান থেকে একজন ব্যক্তি চাইলে পাসপোর্ট তৈরি করতে পারে। আপনি চাইলে সেখান থেকেও একটি পাসপোর্ট এর তথ্য জানতে পারবেন। তবে কোন পাসপোর্টের তথ্য কেউ আপনাকে এমনি এমনিই দিবে না। আপনার কাছে অবশ্যই যথেষ্ট প্রমাণ থাকলে বা কাগজপত্র থাকলে আপনাকে সেই পাসপোর্টের তথ্য কর্তৃপক্ষ দিবে।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট থাকার কারণে আপনি এয়ারপোর্ট এ কম সময়ে ইমিগ্রেশনের কাজগুলো করতে পারবেন। কারণ আপনার সব তথ্য থাকবে অনলাইনে, শুধুমাত্র আপনার পাসপোর্ট কার্ডটি একটি মেশিনের মধ্যে স্ক্যান করলেই আপনার তথ্য পাওয়া যাবে। যার ফলে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও হয়ে যাবে অনেক গুণ ফাস্ট।

নতুন বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম

নতুন বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট করতে গেলে আপনার অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন হবে।

সাধারণ পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে আপনার আর কিছু করা লাগবে না, তবে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার আঙ্গুলের ছাপ, চোখের স্ক্যান ইত্যাদি দিয়ে আসতে হবে। এছাড়া সাধারণ পাসপোর্ট থেকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট তৈরিতে সময় একটু বেশি লাগে।

আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন করার পরে আপনাকে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে ডাকা হবে। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান দিয়ে আসবেন। তারপরে যখন আপনার পাসপোর্টটি তৈরী হয়ে যাবে, তখন আপনাকে একটি মেসেজের মাধ্যমে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে।

(তবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মধ্যে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট নেই। তবে বাংলাদেশে ১০ বছর মেয়াদী বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট পাওয়া যায়।)

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম

সাধারণ পাসপোর্টের মতোই বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট সংশোধন করা যায়। পাসপোর্টে মতে যদি আপনার কোন তথ্য ভুল থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করতে হবে।

আপনি চাইলে অনলাইনেও এই আবেদন করতে পারেন। তবে আমার সাজেশন থাকবে আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করেন, এতে করে আপনার সংশোধন তাড়াতাড়ি হবে। এতে করে ঝামেলায় কম পড়বেন।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর সুরক্ষা

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, সাধারণ পাসপোর্ট এর তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত।

১. বায়োমেট্রিক পাসপোর্টের চিপকে শনাক্ত করা যায় না। প্রতিবার আবেদনের জবাবের জন্য আলাদা আলাদা চিপ শনাক্তকারী, আলাদা চিপ নাম্বার ব্যবহার করে।

২. বায়োমেট্রিক পাসপোর্টের প্রেরিত তথ্যগুলো এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমে বিএসি চিপ এবং চিপের পাঠকের মধ্যকার যোগাযোগ মাধ্যমকে রক্ষা করে। এতে করে বায়োমেট্রিক পাসপোর্টধারী এর তথ্য সুরক্ষিত থাকে।

৩. বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর মধ্যে এমন একটি গোপন কোড থাকে যা পড়া বা কপি করা যায় না। তবে এটা প্রমাণ করা সম্ভব। যার কারণে পাসপোর্ট এর তথ্য সুরক্ষিত থাকে।

৪. ইএসি চিপ এবং পাঠকের সত্যতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটা বিএসি এর চাইতেও শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে। ইএসি সাধারনত আঙ্গুলের ছাপ এবং আইরিশ স্ক্যানকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহৃত হয়। ইএসি ব্যবহার আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে।

৫. বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট এর ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষার জন্য, চিপ এর উপরে পাতলা ধাতব বস্তু ব্যবহৃত হয়। এই ধাতব বস্তুর কারণে ওই চিপের তথ্যগুলো শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট মেশিন দ্বারা পড়া সম্ভব। যার ফলে ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা থাকে।

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট  নিয়ে  সাবধানতা

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport)কি? আবেদন ও সংশোধন করার নিয়ম। অনলাইনের মধ্যে অনেকেই আছে যারা পাসপোর্ট বিষয়ক তথ্য নিয়ে প্রতারণা করে। এছাড়া আপনাকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি বানিয়ে দিবে বলে আপনার থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেবে।

যেহেতু বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার সব ধরনের পার্সোনাল ইনফরমেশন তাকে দিতে হবে, তাই আপনার সেই তথ্যগুলো সে বিভিন্ন অবৈধ কাজে ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

এতে করে আপনার তথ্য ব্যবহার করে হয়তো সে অন্য কাউকে অবৈধ পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে পারে। যার ফলে আপনি পরবর্তিতে বিপদে পড়তে পারেন।

তাই অনলাইনে বা অফলাইনে এর দালালদের থেকে দূরে থাকাই উত্তম। এই ধরনের দালাল যদি আপনাকে বারবার লোভ দেখায় তাহলে আপনি আপনার নিকটস্থ থানা বা পাসপোর্ট অফিসে দ্রুত জানান। এতে করে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আমাদের দেশে কিছুদিন পরপর পাসপোর্ট অফিসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়। সেই অভিযানে অনেক দালালদের এভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।

একই ব্যক্তির তথ্য দিয়ে কখনই একের অধিক পাসপোর্ট তৈরি করবেন না। যদি আপনি তৈরি করেন তাহলে আপনি অপরাধ করেছেন। আপনার এই অপরাধ যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে পড়ে তাহলে আপনাকে শাস্তি ও জরিমানা দিতে হবে। তাই অযথা এই ধরনের ঝামেলায় পড়তে যাবেন না।

এছাড়া অনেক সময় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আপনার থেকে সরকারি খরচের থেকেও বেশি টাকা চাইবে। তাই এধরণের সমস্যায় পড়লে অবশ্যই আপনি তাড়াতাড়ি আপনার নিকটস্থ থানায় জানান।

পারলে যখন তারা আপনার থেকে ঘুষ চাইবে, তখন সেগুলো রেকর্ড করে রাখুন। এবং সেই রেকর্ডিং পুলিশকে দেখালেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। অযথা ঘুষ দিয়ে কোন কাজ করাবেন না। এতে করে একটি দেশের দুর্নীতি আরো বেশি বেড়ে যাবে। মনে রাখবেন ঘুষ দেওয়া এবং ঘুষ নেওয়া দুটোই অপরাধ।

আমাদের শেষ কথা

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport)কি? আবেদন ও সংশোধন করার নিয়ম। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।বাংলাদেশের বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।  উপরে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো সেসব পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পাসপোর্ট  আবেদন  ও সংশোধন করতে পারবেন|

ধন্যবাদ সবাইকে |

Share the article..

Leave a Comment